1. [email protected] : teknafadmin :
  2. [email protected] : unikbd :
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন

আরসা প্রধান এই আতাউল্লাহ কে

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫
  • ১১৮ বার পঠিত

আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি, যিনি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-এর প্রধান, গত সোমবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্রেপ্তার হন। তার গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা সশস্ত্র বিদ্রোহ এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সংঘটিত বড় ধরনের এক সশস্ত্র হামলার পর আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি নামটি প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে। ওই হামলায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ৭১ জন সদস্য নিহত হয় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হামলার এক সপ্তাহ পর আতাউল্লাহ একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে নিজেকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামক একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি মিয়ানমারের বিজিপি পোস্টে হামলার দায় স্বীকার করেন এবং রোহিঙ্গা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। এরপর থেকে আরসার বিভিন্ন ভিডিও বার্তায় আতাউল্লাহর উপস্থিতি ও বক্তব্য প্রকাশ পেতে থাকে।

আতাউল্লাহর জন্ম ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে। তার পরিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী। ১৯৬০-এর দশকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে তার পরিবার পাকিস্তানে আশ্রয় নেয় এবং পরে সৌদি আরবের মক্কায় বসবাস শুরু করে। আতাউল্লাহ সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অষ্টম। ছয় বছর বয়সে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে চলে যান এবং সেখানে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ইসলামী শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে মক্কা ও রিয়াদে শিক্ষকতা করেন এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হলে আতাউল্লাহ সৌদি আরব ত্যাগ করেন এবং রোহিঙ্গা প্রতিরোধ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৩ সালে তিনি আরসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

×

 

 

আরসা প্রধান এই আতাউল্লাহ কে

কক্সবাজার অফিস

 

প্রকাশ : ৩ ঘণ্টা আগে

আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি

আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি

আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি, যিনি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-এর প্রধান, গত সোমবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্রেপ্তার হন। তার গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা সশস্ত্র বিদ্রোহ এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সংঘটিত বড় ধরনের এক সশস্ত্র হামলার পর আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি নামটি প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসে। ওই হামলায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ৭১ জন সদস্য নিহত হয় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হামলার এক সপ্তাহ পর আতাউল্লাহ একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে নিজেকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামক একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি মিয়ানমারের বিজিপি পোস্টে হামলার দায় স্বীকার করেন এবং রোহিঙ্গা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। এরপর থেকে আরসার বিভিন্ন ভিডিও বার্তায় আতাউল্লাহর উপস্থিতি ও বক্তব্য প্রকাশ পেতে থাকে।

আতাউল্লাহর জন্ম ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে। তার পরিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী। ১৯৬০-এর দশকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে তার পরিবার পাকিস্তানে আশ্রয় নেয় এবং পরে সৌদি আরবের মক্কায় বসবাস শুরু করে। আতাউল্লাহ সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অষ্টম। ছয় বছর বয়সে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে চলে যান এবং সেখানে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ইসলামী শিক্ষায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে মক্কা ও রিয়াদে শিক্ষকতা করেন এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হলে আতাউল্লাহ সৌদি আরব ত্যাগ করেন এবং রোহিঙ্গা প্রতিরোধ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৩ সালে তিনি আরসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন

২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) জানায়, আতাউল্লাহ পাকিস্তানে তালেবানের অধীনে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং লিবিয়াতেও সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তার নেতৃত্বে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের পুলিশ পোস্টে হামলা চালানো হয়, যেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আরেকটি বড় হামলায় ৭১ জন নিহত হয়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালায়, যার ফলে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

গত ১৮ মার্চ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) আতাউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। রিজওয়ান রুশদী ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়।

গ্রেপ্তারের সময় আতাউল্লাহর কাছ থেকে নগদ ২১ লাখ ৩৯ হাজার ১০০ টাকা, একটি চাকু, ধারালো স্টিলের মোটা চেইন ও চারটি হাতঘড়ি জব্দ করা হয়। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খোরশেদ আলম মোল্লা জানান, গোপন বৈঠক করার সময় র‌্যাব অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ছয়জন এবং ময়মনসিংহ থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বলেন, সংঘবদ্ধভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় গুপ্তচরের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কোনো পাসপোর্ট বা ভিসা নেই বলে জানান তিনি। আদালত ছয় আসামিকে পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ মার্চ রাত ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় ও ময়মনসিংহ সদর থানার নতুন বাজার মোড় এলাকার গার্ডেন সিটিতে আরসার কতিপয় সদস্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও অপরাধ সংঘটনের লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করছিল। নারী-শিশুসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগেও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও গুরুতর অপরাধ সংঘটনের লক্ষ্যে গোপন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় তারা ওই বৈঠক করছিলেন।

আতাউল্লাহর নেতৃত্বে আরসা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তার বেপরোয়া সিদ্ধান্তের কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডেও আতাউল্লাহর ভূমিকা রয়েছে বলে র‌্যাব জানায়। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের এক বৈঠকে মুহিব্বুল্লাহ হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। দুই দিন পর, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ১২ জনের একটি কিলার গ্রুপ মুহিব্বুল্লাহর কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং তাকে গুলি করে হত্যা করে। র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পক্ষে থাকায় মুহিব্বুল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল আরসা। আতাউল্লাহ তাকে মিয়ানমারে আরসার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ের বিশেষ একটি দল। এ সময় আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন ডিজিএফআইয়ের স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী। গুলিবিদ্ধ হন র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সদস্য সোহেল বড়ুয়া। এ ছাড়া গুলিতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে সাজেদা বেগম (২০) নামের এক রোহিঙ্গা তরুণীও নিহত হন।

২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ডিজিএফআই কক্সবাজার কার্যালয়ের মাঠ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে বান্দরবান চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে এবং বিচারিক কার্যক্রম চলছে।

আতাউল্লাহর গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা বিদ্রোহ ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তার কার্যক্রম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করেছে। তার বিচার রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫