1. [email protected] : teknafadmin :
  2. [email protected] : unikbd :
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

টেকনাফে সংখ্যালঘু রাখাইনদের শত বছরের পুরনো ভূ-সম্পত্তি জবরদখল মাঠে নেমেছে ভূমিদুস্যু চক্র

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২৫৫ বার পঠিত

টেকনাফে সংখ্যালঘু রাখাইনদের শত বছরের পুরনো ভূ-সম্পত্তি জবরদখল করতে এবার মাঠে নেমেছে একটি ভূমিদুস্যু চক্র। রাখাইন পরিবারে একমাত্র ওয়ারিশ টেকনাফ বাজারপাড়ার মৃত ক্য থিন জ এর স্ত্রী খিং ওয়ান মে (৪৬) বাদী হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। উক্ত অভিযোগে ইলিয়াস, রাজু, আলমগীর ও সেলিমকে বিবাদী করা হয়।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার উপরের বাজার এলাকায় বসত-বাড়ি জমিজমা, মার্কেট নিয়ে শত বছরের পুরানো রাখাইন জমিদার ক্যাজা প্রু চৌধুরীর বংশধরদের অবস্থান। বংশ পরস্পরায় যুগ যুগ ধরে এই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছেন তার ওয়ারিশগন। সম্প্রতি সেই জমিজমার উপর কুনজর পড়েছে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটটির। তারাই ভূঁয়া ওয়ারিশ সাজিয়ে জাল দলিল সৃজন করে উক্ত সম্পত্ত্বি দখলের পায়তারা চালিয়ে বসত-ভিটা, মার্কেটসহ ২ একর ৩২শতক জমি জবর দখলে তৎপর হয়ে উঠেছে।
খিং ওয়ান মে থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট ৫ ফেব্রুয়ারী পরস্পর যোগসাজশে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য পূরনের জন্য অতি লোভের বশীভূত জোরপূর্বক জমি জবরদখলের পায়তারা চালাচ্ছে। এব্যাপারে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালীশ বৈঠক হইলেও ভূমিদস্যু চক্র কাহারো শালিস মানে না। এমনকি ভূমিদস্যু চক্র স্বামী মৃত হওয়ায় উক্ত জমি জোর পূর্বক ভাবে কেড়ে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে এবং মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবী করছে। ভূমিদস্যু চক্র পাহারা বসিয়ে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় বিভিন্ন ধরনের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং হুমকি ধমকি প্রদান করেন। এসময় বাদীনির পরিবারের সদস্যদেরকে দেখে নিবে মর্মে জানায়। বিবাদীরা উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় বড় ধরনের ক্ষতি করিতে পারে বিধায় আমরা বিবাদীদের এহেন হুমকি ধমকিতে খুবই নিরাপত্তাহীনতায়। এব্যাপারে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্তরা সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং চাঁদবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএস ৭২০ ও ৯১০ নং খতিয়ানের ২ একর ৩২ শতক জমির স্বত্ত্ব রয়েছে রাখাইন জমিদার ক্যা¤্রাউ চৌধুরীর দুই পুত্র ওখা খাইন চৌধুরী উরফে মংগ্রী চৌধুরী ও কি মং চৌধুরীর নামে। কিন্তু ২০১৫ সালে প্রকাশিত দিডারা খতিয়ানে(নং ৮৯৬) বি,এস খতিয়ানের মালিক উখা খাইনের স্থলে উথা থাউ এবং পিতা ক্যাম্রাউ চৌধুরীর স্থলে ফেম্রাউ চৌধুরী লিপিবদ্ধ হয়। এদিকে দিয়ারা জরিপটি ভূল হলেও মংগ্রী চৌধুরীর ছেলে ক্যাথিন জ্য চৌধুরীর জীবদ্দশায় কেউ দখলের সুযোগ পায়নি। কিন্তু গেলো বছর ক্যাথিন জ্য চৌধুরীর মৃত্যু হয় এবং পরিবারের অপরাপর সদস্যদের দীর্ঘ বছর প্রবাসে অবস্থান এবং দিয়ারা জরিপের ভূলের সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট দখলের উদ্দেশ্যে উথা থাউ চৌধুরী নামের একজন ভূয়া ওয়ারিশ সৃষ্টি করে এবং ঝিনাইদাহ পৌরসভা থেকে বৌদ্ধ বিহার রোড , বড়–য়া পাড়া, কক্সবাজার এর ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন (নং- ১৯৮৬২২১২৪৪৭১০৬৩৭৩) সনদ সংগ্রহ করে। কিন্তু এই ঠিকানায় উল্লেখিত ব্যক্তির খোঁজে পাওয়া যায়নি এবং উথ থাই নামে ঐ ব্যক্তিকে কেউ চেনেনা কেউ।

সেই ভূয়া ওয়ারিশ উথা থাউ কে দাতা ও টেকনাফ ডেইলপাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মৌলভী ছৈয়দ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রহীতা করে আম মোক্তার নামা দলিল সৃজন করে, (যার নং- ১২৯০/২০২১ইং)। সে আম মোক্তার নামামূলে আরো বিভিন্ন জনের কাছে জমি ও দোকানপাট বিক্রি শুরু করে দেয়। এমনকি তারা সেখানে অবৈধ জবর দখল স্থাপনা নির্মান চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রকৃত ওয়ারিশগন আদালতের শরনাপন্ন হয়ে ওই দলিলটি ভূঁয়া দাবী করে বাতিলের আবেদন করে এবং উল্লেখিত জমিতে ১৪৪ ধারা বজায় রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু ভুমি দস্যু সিন্ডিকেটটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় লাটিয়াল বাহিনী নিয়োগ করে স্থাপনা নির্মান করে দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে। আর এই জবর-দখলের নেতৃত্ব দিচ্ছে মৌলভী হাবিব উল্লাহ প্রকাশ হাবিব শাহ নামে এক ব্যক্তি। প্রভাবশালী মহলের যোগ-সাজশে এই জবর-দখলের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন জামির প্রকৃত মালিকরা। পরবর্তিতে গত ৯ই মার্চ ভূমি দস্যু সিন্ডিকেটের মূল হোতা মৌলভী হাবিব শাহসহ সিন্ডিকেটের বাকী সদস্যদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়।
জানা গেছে এই র্ভঁয়া দলিলটি সম্পাদন করেন দেলোয়ার হোসেন নামে একজন দলিল লিখক। তিনি আবার নিজে ঐ জমির ভূঁয়া দাতা উথা থা চৌধুরীর সনাক্তকারীও।

এদিকে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভূমি দস্যু চক্রটি হাবিব শাহ ও সন্ত্রাসী নূর মোহাম্মদ প্রকাশ লাস্ট্রিপের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ২২ জানুয়ারী জমিটিতে ঘেরা-বেড়া দিয়ে জায়গাটি তাদের দখলে নেয় এবং ইট কংক্রিট দিয়ে স্থাপনা নির্মান শুরু করে।

মৌলভী হাবিব ও নূর মোহাম্মদ উরফে লাস্ট্রিপ উক্ত জমিতে ২৫-৩০ বছর ধরে যেসব পুরাতন ভাড়াটিয়া দোকানদার রয়েছে তাদেরকেও পুরনো তারিখে নতুন করে চুক্তি করতে ভয় ভিতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। দোকান মালিকরা চুক্তি করতে অপারগতা জানালে রাতের আধারে নূর মোহাম্মদ লাস্ট্রিপের নেতৃত্বে দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপে দুই দফা তালা খোলা হয়।
আপরদিকে স্থানীয়রা আরো জানায়, এক সময়ের মাইক দোকানদার মৌলভী হাবিব প্রকাশ হাবিব শাহ ধর্মীয় লেবাজকে পুঁজি করে ইতিপূর্বেও বিভিন্ন জনের জমিজমা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে জাল দলিল গ্রহীতা সৈয়দ হোসেন তাদের জমি দাতা এই জমির প্রকৃত ওয়ারিশ বলে দাবী করেন। তবে দলিলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলাকালীন জমি দখল ও স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।

টেকনাফ উপজেলার এক রাখাইন নোতা জানান-যেখানে সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় ভূমিদস্যু চক্র সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ করে বিতাড়িত করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এসব বন্ধে প্রশাসনের সংখ্যালঘুদের পাশে থাকা উচিত।

টেকনাফ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পৌরসভার বাসিন্দা মোজাম্মেল বলেন, জন্ম থেকে আমরা দেখে আসছি এসব ভূমি গুলোতে রাখাইন জমিদার পরিবারের বসতি। এসব রাখাইন জমিদার ক্যাজাপ্রু, ক্যাম্রাউ চৌধুরীর আদি ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। আজ প্রভাব খাটিয়ে তাদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে বিতাড়িত করা খুবই দুঃখ জনক। উথা থাউ নামে যে ব্যক্তির নামে যে জমি দখল করা হচ্ছে আমরা কোন দিন তার নাম শুনিনি আর চিনিও না।

টেকনাফ উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক এবিএম আবুল হোসেন রাজু বলেন, যেকোন ধরনের জবর দখল বেআইনী। কেরো কোথাও স্বত্ব থেকে থাকলে আইন-আদালত ও সালিশের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত
রেফারিজ এসোসিয়েশনের সদস্য উক্ত জমিতে দুই পুরুষ ধরে বসবাসকারী বাবুল শর্মা জানান, জমিদার ক্যাম্রাও চৌধুরী তার পিতা রেফতি শর্মাকে প্রায় ৭০ বছর আগে এখানে বসবাস করতে দেন সেই থেকে বসবাস করে আসছেন। জালিয়াপাড়া এলাকার কিছু লোক তার পাশের জমি গুলো দখল করে নেয়। এখন তাদেরকেও উঠে যেতে হুমকি দিচ্ছে।

রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রবীণ ব্যক্তি ও টেকনাফ সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মং উইন মিনথ প্রকাশ মগ স্যার বলেন, রাখাইন নাম বাংল্য়া লিখতে গেলে প্রায় সময় ভূল হয়ে থাকে। মংগ্রী চৌধুরীর দালিলিক নাম ছিল উখ্যাখাইন চৌধুরী। ভূমি জরিপে নামের ভূলের সুযোগ নিচ্ছে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। উথা থাউ নামে কাউকে চিনেন না বলে জানান তিনি।

টেকনাফ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫