1. [email protected] : teknafadmin :
  2. [email protected] : unikbd :
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২২ পূর্বাহ্ন

উখিয়া-টেকনাফ বিএনপি মাদক কারবারিদের দলে ভিড়িয়ে কমিটি বাণিজ্য

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ৩ মার্চ, ২০২৫
  • ২৫২ বার পঠিত

কক্সবাজারের আলোচিত ও সীমান্ত জনপদ উখিয়া-টেকনাফের চিহ্নিত মাদক ও মানব পাচারকারীদের নিয়ে দল ভারি করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে ‘কমিটি বাণিজ্য’র মাধ্যমে বঞ্চিত করা হচ্ছে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের।

গত ১৫ বছর ধরে পতিত আওয়ামী লীগ ও আলোচিত-সমালোচিত ‘ইয়াবা গডফাদার’ আবদুর রহমান বদির সাহচর্যে থাকা শীর্ষ মাদক কারবারি ও চিহ্নিত মানব পাচারকারীরা বিএনপির শীর্ষ এক নেতার ছত্রছায়ায় রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন।

৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ানো পদধারিরাও নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছেন বিএনপিতে।

আওয়ামী শাসনামলে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ছত্রছায়ায় ছিলেন টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর এনামুল হাসান। তিনি ও তার ভাই সিআইপি ওমর ফারুক মিলে সামলেছেন বদির সব ধরনের অবৈধ বাণিজ্য।

৫ আগস্টের কয়েকদিন আগেও এই এনামুল হাসানের নেতৃত্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে টেকনাফ শহরে বিশাল মিছিল বের করা হয়। আর সেই এনামুল হাসানই রাতারাতি অর্থের বিনিময়ে বনে গেছেন টেকনাফ পৌর বিএনপির ‘সিনিয়র সহসভাপতি’ এবং আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের পৌর কমিটির ‘সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক’।

টেকনাফের বড় হাবিরপাড়ার ফরিদুল আলমের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদক মামলা রয়েছে ডজনের বেশি। এলাকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সেই ফরিদুল আলম এখন কক্সবাজার জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি।

একই ভাবে পুলিশের ওপর হামলা ও ডজনের বেশি মাদকের মামলা নিয়ে কয়েক বছর কারাভোগের পর বের হয়েই সেই নেতার আশীর্বাদে সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন মিঠাপানির ছড়ার শামসুল আলম।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে মাদক ও মানবপাচার মামলার আসামি মোহাম্মদ হাশেম ভুলুকে আহ্বায়ক ও নুরুল আলমকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। একই কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে কৃষক লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি এজাহার মিয়া মাঝিকে।

বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর গ্রিন সিগন্যালেই এসব মাদক কারবারি ও মানব পাচারকারীদের পদ দেওয়া হয়েছে। নব্য পদ পাওয়া বিএনপি নেতাদের অনেকেরই আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল-সমাবেশ করার ছবি-ভিডিও রয়েছে।

টেকনাফ পৌর বিএনপির সদস্য ও পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, বদির ভগ্নিপতি ও ক্যাশিয়ার এবং ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলাকারীদের অর্থের বিনিময়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।

একই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, বদির আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের এখন দলে স্থান দেওয়া হচ্ছে। তার মতে, সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি এবং কালো টাকার মালিকরা টেকনাফ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন।

টেকনাফের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হ্নীলা ও হোয়াইক্যং এলাকায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান ছিদ্দিকী ও যুবদলের আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধেও কমিটি বাণিজ্য ও অপহরণ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ মতে, আবদুল কাইয়ুম নিজেকে জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর পিএস পরিচয় দিয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি বাণিজ্যের আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। আলোচিত এনামুল হাসানকে বিএনপির কমিটিতে সহসভাপতি করতে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন এবং প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন।

টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান সিদ্দিকী ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায় আবদুল কাইয়ুম এবং কক্সবাজারে বসবাসকারী সাsবরাং এলাকার এক বিএনপি নেতা বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দিয়ে একাধিক ইয়াবা মামলার আসামি শামসুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন।

একই ভাবে সাবরাং ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতেও ৩০টির অধিক মাদক মামলার আসামি মোহাম্মদ হোসেন ভুলুকে সভাপতি ও হত্যা মামলাসহ ১৫টির বেশি মামলার আসামি নুরুল আমিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ১৬ বছরে জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী নিজেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের রাজনীতি করেছেন। যেখানে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা, সেখানে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি।

ওই নেতার মতে, টেকনাফে যেসব কমিটিতে মাদক কারবারি, আওয়ামী দোসর ও সন্ত্রাসীদের স্থান দেওয়া হচ্ছে, সবই তার ইশারায় হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতনের পর এসব অপরাধী ও দাগী ব্যক্তি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের আধিপত্য জানান দিচ্ছেন। তবে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিকরা বলছেন, শাহজাহান চৌধুরীর অনুমতি ছাড়া কোনো কমিটি দেওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি নাছির উদ্দীন বাচ্চু জানিয়েছেন, এনামুল হাসানকে কমিটিতে নেওয়া হলেও আওয়ামী রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি টেকনাফ পৌর বিএনপির কমিটিতে আছেন।

টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান সিদ্দিকী বলেন, সাবরাং ইউনিয়ন বিএনপির আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দায়িত্ব পাওয়াদের বিরুদ্ধে আওয়ামী শাসনামলে মিথ্যা মামলা ছিল, তাদের মাদকসহ গ্রেফতারের ঘটনা ও আর্থিক কেলেঙ্কারি নেই।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেকে সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, টেকনাফের অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনোভাবে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।

এ নিয়ে সুবিধা নেওয়া ও নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এনামুল হাসান ছাত্রদল থেকে উঠে আসা বিএনপির কর্মী।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫