কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে বছরজুড়েই লেগে আছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণের ঘটনা। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষেরাই অপহরণের শিকার হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান-গ্রেপ্তারেও অপহরণের ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যমতে, গত এক বছরের কিছুটা বেশি সময়ের মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৮৬ রোহিঙ্গা নাগরিকসহ অন্তত ১৯৩ জন। এর মধ্যে অন্তত ৯৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁরা টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে অপহৃত হন।
১৮ ও ১৯ জানুয়ারি সরেজমিন টেকনাফ ঘুরে সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, রোহিঙ্গা নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার একাধিক মানুষের সঙ্গে অপহরণের বিষয়ে কথা হয়। তাঁরা এসব অপহরণের ঘটনায় মাদকের চোরাচালান, মানব পাচার, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার এবং অভিযান পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মানব পাচার ও মাদক চোরাচালানকে ঘিরেই মূলত টেকনাফে বছরজুড়ে অপহরণ-মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ পাহাড়ে আস্তানা গেঁড়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তুতি চলছে।
কেন এত অপহরণ
টেকনাফের পূর্ব পাশে ৪ কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী, এরপরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। সহজে ওপার থেকে ইয়াবা ও আইসের চালান আনা যায়। অন্যদিকে টেকনাফের হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়নে গড়ে তোলা হয়েছে ৩ লাখ রোহিঙ্গার ১১টি আশ্রয়শিবির। আশ্রয়শিবিরগুলোর অভ্যন্তরে এবং পশ্চিম পাশে লাগোয়া কয়েকটি পাহাড়ে ১০ থেকে ১২টি রোহিঙ্গা ডাকাত দল ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানা রয়েছে। তাদের ম্যানেজ করে চলে ইয়াবা-আইসের কারবার। চাঁদা না দিলে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
গত এক বছরে টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ২০টি। নানা ঘটনায় এ পর্যন্ত অপহৃত ১৩৮ জনকে উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইয়াবার কারবার, মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়েবিরোধ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দিয়ে অপহরণ–বাণিজ্য চালানো হচ্ছে। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ওসি গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, ‘মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত ব্যক্তিদের ছাড়িয়ে আনার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও ভুক্তভোগীদের কেউ থানায় এসে অভিযোগ করতে চান না, কোনো তথ্যও দেন না—এটি রহস্যজনক।’